শিক্ষা ওয়েব
ঢাকা : ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। হ্যাঁ, প্রতি বছর খুশির বরাত নিয়ে ঈদ আসে আমাদের মাঝে। কিন্তু এবারের ঈদটা ছিল শোকে কাতর। তবুও ধনী-গরীব, ছোট-বড় সকলে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আনন্দময় পরিবেশে পালন করে নিয়েছে ঈদুল ফিতর। যে যতটুকু পেরেছে সে ততটুকু আনন্দকে লুফে নেয়ার চেষ্টা করেছে। দিনটিকে পরিবারের সাথে আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছুটে গেছে গ্রামের বাড়ি। পিতামাতা আত্মীয় স্বজনের সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো নিয়ে ঈদ আয়োজনে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) আট তরুণের ঈদ আনন্দ।
সাইফুল ইসলাম সজীব, লোক প্রশাসন বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ
‘ঈদ সবসময় মুসলিম উম্মার কাছে একটি বিশেষ দিন। এবারের ঈদটা বাবা মায়ের সাথে করতে পেরে একটু বেশিই আনন্দিত। আর সেই সাথে সবাইকে নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করা, ফটো সেশন, সেলফি এসব যেন অন্য সময়ের ঈদের চাইতে একটু বেশিই আনন্দিত করেছে। আর বিকেলে গ্রামের পুরাতন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় কাটানো ছিল অন্য রকম আরেকটি ভালোলাগা।’
আশিকুর রহমান রুশো, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ
আমার কাছে এবারের ঈদের আমেজে যোগ হয়েছে ‘আতঙ্ক’। জঙ্গি হামলা একটা নতুন আতঙ্কের নাম। ভাবতে অবাক লাগছে ঈদের নামাজেও হামলা। গুলশান হামলার পর সাধারণ মানুষ বড় অসহায় হয়ে গেছে। এর প্রভাব দিনের আলোর মত পরিষ্কার, ঈদের দিনেও সবাই বাসায় থাকছে, বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে অনিশ্চয়তার। সন্ধ্যা হতেই সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। গাইবান্ধার মত মফস্বল শহরেও যখন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব টহল দিচ্ছে। সব কিছু বাদ দিয়ে আমরা বন্ধুরা যখন আড্ডা দিতে প্রস্তুত তখন পুলিশের বাধা, থাকা যাবে না, সিকিউরিটি দিতে পারবে না। নেহায়েতে চেনা মুখ ছিল তাই আমরাও চলে গেলাম। আতঙ্ক আমাদের মনে খুব ভালোভাবেই আছে। বাসা থেকে ফোনের পরিমাণ আরো বেশি। সব কিছুর উপর একটা কালো ছায়া পড়েছে। মহান আল্লাহ এর কাছে প্রার্থনা সবাইকে যেন তিনি নিরাপদে রাখেন।’
খান মুনতাসির আরমান, আইন ও বিচার বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ
মায়া ও মমতায় জড়ানো শৈশবকে খুঁজে পাওয়া এখন বেশ কষ্টসাধ্য। এলোমেলো পরিচর্যাহীন রঙিন সময় হয়তো এখন ঈদের অনুভূতি হয়ে ওঠে না। মধ্যবিত্ত পরিবারে ২২টি ঈদকে পার করে এখন আমি সত্যিই ঈদকে আনন্দের সাথে মেলাতে পারি না। বরং আমার কাছে ঈদ মানসিক অস্বস্তি আর ব্যস্ত সময় থেকে নিজেকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য বাছাই করা একটা দিন। হ্যাঁ, আমি নিশ্চিতভাবে সব চিন্তা-ব্যস্ততা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো একটা দিন কাটিয়েছি।
তরিকুল ইসলাম বাপ্পি, ইতিহাস, ৪৩তম ব্যাচ
আমার জীবনের এবারের ঈদটা কেটেছে অন্য এক অনুভূতির মধ্যে। প্রচন্ড বুকের ব্যাথায় ছিলাম হাসপাতালে ভর্তি। বাড়ির মাটিতে ঈদের নামাজ পড়ার ছিল প্রবল ইচ্ছা। তাই ভাল লাগছে বলে ডাক্তারকে মিথ্যা কথা বলে বাড়িতে চলে আসি। ভাবছিলাম মারাই যাব আর কোন দিন ঈদ পালন হবে না। আমি রাতে জানি না কাল ঈদে যেতে পারব কিনা? তবুও স্বপ্ন দেখে বুকের খুব ব্যথা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল এ উঠতে একটু দেরি হল কারণ কেউ আগে ডাকেনি। কিন্তু অলৌকিক ব্যাপার সকালে উঠে আমার একটুও ব্যাথা অনুভব হল না। আমার এরকম দেখে সবার চোখে সরিষা দেখার মত। আমার ইচ্ছা শক্তি আমাকে আমার মাতৃভুমির মাটিতে ঈদের নামাজ পাড়ার সুযোগ করে দিল।
শান্ত সেতু, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ
ঈদের দিন যদি কারো জন্মদিন হয় তবে সেই ভাললাগা কেমন হয় আজ বুঝলাম। ০৭.০৭ তারিখটা আমার জন্মদিন ছিল। ৯ বছর পর এবার সেইদিনে আমি বাড়িতে। রাত ১২টায় পরিবারের সাথে কেক কাটলাম। প্রায় সারারাত দেশের এবং দেশের বাইরের অনেকে আমাকে শুভকামনা জানালেন। সকালে আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক আমাকে বাড়িতে এসে চমকে দিলেন। দুপুরে আমার থিয়েটারের মানুষ জন দেখা করতে আসলেন। একটানা ঝুম বৃষ্টির পর গ্রামের বাইরে বের হলাম। আমার জীবনে এই প্রথম ঈদে বাড়ি থেকে বের হলাম। বিকাল থেকে রাত অবধি পুরো চুয়াডাঙ্গা শহর বাইকে চড়ে ঘুরলাম। বৃষ্টিতে ভিজে পাগলের মত আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। চুয়াডাঙ্গারর সন্তান যারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে আছি সবাই একত্রিত হলাম। তারপর আলো আধারী রাতে আকাশের চাঁদ আর তারা দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরলাম।
জুলফিসা রাব্বি মুমো, চারুকলা বিভাগ, ৪৪তম ব্যাচ
ঈদ মানে সকালবেলা মেহেদী রাঙানো হাত, আব্বুর হাতের সেলামী, আম্মুর হাতের রান্না, ছোট ভাইয়ের সাথে সেলফী, আর বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি, আর ক্লান্তি ভরা রাতের ঘুম। কিন্তু এবার ঈদটা একটু ব্যতিক্রম ছিল। সব কিছুর মাঝে কাজ করছিল আতঙ্ক। আতঙ্ক নিয়ে ঈদ কাটানো আর পায়েস সেমাই খাওয়া যায়, কিন্তু ভালো থাকা যায় না। যাই হোক,আগামীতে ভীতিহীন নিরাপদ ঈদ কাটাতে চাই। চাই মনখোলা হাসি দিয়ে খুশির দিন ঈদকে আরো ভালোবাসতে। রিমঝিম বৃষ্টি আর নতুন জামা সাথে করে ঘরে বসে কাটানো এই ব্যতিক্রমী ঈদটা তেমনটাও খারাপ ছিল না।
বছর ঘুরে ফিরে আবার আসুক ‘শুভ দিন’।
হাবিবুর রহমান মিরন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ৪৪তম ব্যাচ
ভালই কেটেছে দিনটি। নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম আর এলাকায় ঘুরাঘুরি। অনেকদিন পর সবাই একসাথে। তবে সবাই ছিল একটু চিন্তিত। কারণ দেশের এহেন পরিস্থিতিতে আমরা অনেক বেশী ঝুঁকিতে আছি বলে মনে হচ্ছে। পরপর দুই বার দেশের দুই জায়গায় হামলা! ঈদের দিনেও বিস্ফারণ! এখন নিরাপদ থাকাটাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। আজকে আমি হয়তবা হামলার শিকার হইনি, আমার এলাকায় কোন নাশকতা ঘটে নি। কিন্তু কালকে যে ঘটবে না তার কি নিশ্চিয়তা! ঈদের নামাজ পড়ে এসে যখন এরকম ঘটনা শুনি তখন আসলে অনুভূতি ব্যক্ত করার মত কিছুই থাকে না।
জাহিদুল ইসলাম শোভন, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ৪৪তম ব্যাচ
অনেক ভাল কেটেছে ঈদের দিন। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে মজার সব খাবার খাওয়া। নানা নানি দের সাথে দেখা করা। বাসায় ফিরে আবার বন্ধুর সাথে দেখা করতে মগবাজার গেলাম, আড্ডা দিলাম, সেলফি তুল্লাম। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরা।